আজ শনিবার, ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সোনারগাঁয়ে আম ও লিচু বাগানে মুকুলে ভরপুর

মুকুলে ভরপুর

সোনারগাঁয়ে আম ও লিচু বাগানে মুকুলে ভরপুরমুকুলে ভরপুর

গাজী মোবারক:
ও মা ফাগুনে তোর আমের বনের ঘ্রানে পাগল করে মরি হায় হায়রে …
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জাতীয় সংগীতের সেই আমের বনের ঘ্রাণে সারা বাংলার সাথে ঐতিহাসিক প্রাচীন নগরী ঈশা খাঁ’র রাজধানী খ্যাত সোনারগাঁয়ে প্রতিটি এলাকায় মৌ মৌ করছে। গাছে গাছে মুকুলে ভরে গেছে সোনারগাঁয়ের আম ও লিচু বাগান। আম লিচুর মুকুলে মৌমাছির গুনগুনানী, প্রজাপতির রঙিন ডানায় ভর করে কৃষকের ঠোটে ভেসে ওঠছে মধুর হাসি। প্রয়োজনীয় সার-কীটনাশকসহ বাগান পরিচর্যার মাধ্যমে ফলন বাড়াতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন চাষীরা।
সোনারগাঁয়ের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে এ বছর আম-লিচুর মুকুল অনেক বেশী। বাগান মালিক এবং সংশ্লিস্ট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এবার সোনারগাঁয়ে আম ও লিচুর বাম্পার ফলনের আশা করছে। প্রেমের বাজার পূর্বপাড়ার লিচু চাষী আমির হোসেন জানান, প্রাকৃতিক দূর্যোগ না হলে চলতি মৌসুমে আম ও লিচুর ভালো ফলন হবে এবং অর্থনৈতিকভাবে সবাই লাভবান হবেন।
সোনারগাঁও পৌরসভার গাবতলী, দিঘিরপাড়, বালুয়াদিঘির পাড়, গোয়ালদিসহ সনমান্দি, মোগরাপাড়া, বৈদ্যের বাজার বারদী, সাদিপুর ও জামপুরে রয়েছে আম ও লিচুর বাগান। অন্যান্য ফসলের চেয়ে লাভ জনক হওয়ার প্রতিবছরই বাগানের সংখ্যা বাড়ছে।
কৃষি কর্মকর্তা আশেক পারভেজ জানান, এ বছর সোনারগাঁয়ের প্রায় ২৫০ হেক্টর জমিতে আম ও ১০০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ হয়েছে। এ থেকে উৎপাদন আসবে প্রায় ২.৫ হাজার টন আম ও ৬-৮ শত টন লিচু। এ অঞ্চলের লিচুর মধ্যে কদমি ( বোম্বাই ), চায়না থ্রি, বেদেনা, এলাচি ও পাতি লিচু উল্লেখযোগ্য। আমের মধ্যে রয়েছে আমরূপালী, ল্যাড়া, সিন্দুর ও কাঁচামিঠে।
তিনি জানান, আমের কীটশত্রুর অন্যতম হল শোষক পোকা, দয়ে পোকা, কা- ছিদ্রকারী পোকা এবং পাতা মোড়া পোকা। রোগগুলির মধ্যে অন্যতম হল ক্ষতরোগ বা অ্যানথ্রাকনোজ, সাদা গুঁড়ো ইত্যাদি। ক্ষত রোগ ধরলে মুকুল বা গুটি ঝরে পড়ে। এর প্রতিকারে মার্বেল অবস্থায় বা মুকুলে থায়োফ্যানেট মিথাইল ৭০% ডব্লুপি ২.৫ গ্রাম প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করলে সুফল পাওয়া যায়। আম গাছে শোষক পোকার সমস্যা সবচেয়ে ব্যাপক। সাদা, সবুজাভ হলুদ বা হাল্কা হলুদ রঙের পোকাগুলি আমের মুকুল আসার পর ঝাঁকে ঝাঁকে আক্রমণ করে। মুকুল আসার পর ক্লোথায়ানিডিন ৫০% ডব্লুডিজি ১ গ্রাম প্রতি ১০ লিটার জলে বা অ্যাসিফেট ৭৫.৫ ডব্লুপি ০.৭৫ গ্রাম বা থায়োক্লোরপ্রিড ১ মিলি প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করতে হবে। সাদা তুলোর মতো দয়ে পোকা মুকুলে ধরতে পারে। এরা থাকলেই পিঁপড়ে আসবে। বেশি পোকার আক্রমণ হলে ডাইক্লোরোভস ৭৬% ইসি ০.৭৫ মিলি বা ডাইমিথোয়েট ৩০% ইসি ২ মিলি প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করতে হবে। লিচু গাছে যে নতুন শাখা আছে, তাতে মাকড়ের আক্রমণের সম্ভাবনা থাকে। আক্রান্ত ডাল-পাতা তুলে পুঁতে ফেলতে হবে বা পুড়িয়ে দিতে হবে। আক্রমণ না হলেও গরম পড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিমজাত কৃষি বিষ ১০,০০০ পিপিএম ২-৩ মিলি প্রতি লিটার জলে গুলে দু’সপ্তাহের ব্যবধানে কয়েকবার স্প্রে করতে হবে। আক্রমণ দেখা গেলেই জলে গোলা সালফার ২ গ্রাম প্রতি লিটার জলে ও তার ৫-৭ দিন পর প্রোপারজাইট ২ মিলি বা অ্যাবামেকটিন ২ মিলি প্রতি লিটার জলে আঠা দিয়ে স্প্রে করতে হবে।
সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মনিরা আক্তার বলেন, অনেক সময় কুয়াশার জন্য আম-লিচুর মুকুলে কালো ক্ষতের সৃষ্টি হয়। এর জন্য ট্রাইকোডার্মা ভিরিডি ৫ গ্রাম প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করতে হবে। এর সঙ্গে কোনও রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার করা যাবে না। এছাড়াও ম্যানকোজেব ৭৫.৫ ডব্লুপি ২-২.৫ গ্রাম বা থায়োফেনেট মিথাইল ৭০% ডব্লুপি ১ গ্রাম প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করতে হবে।
ভট্টপুরের লিচুচাষী শাহজালাল জানান, সোনারগাঁ কৃষি কর্মকর্তারা নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করছেন

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ